How to ready the cooking food
কতক খাবার আমরা কাচা খাই আবার কতক খাবার রান্না না করে খাওয়া যায় । ফল এবং কিছু সবজি কাঁচা খাওয়া যায়। কিন্তু অন্যান্য খাবার বিনা রান্নায় খাওয়া চলে না, রান্না করে খেতে হয়। রান্না বলতে খাদ্য ধুয়ে কেটে বা অন্য কৌশলে তৈরি করে চুলায় চাপান বুঝায়। চুলায় চাপিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাবার রান্না হয়। কিভাবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে রান্না হয় তা জানার আগে রান্না কেন করা হয়। সে কারণ জানা দরকার। তিনটি কারণে রান্না করা হয়—
১) মাছ-মাংস, শাক-সবজি, চাল-ডাল ইত্যাদি কাঁচা খাদ্য রান্না করে নিলে সহজে পরিপাক হয়। খাদ্য সহজপাচ্য করা রান্নার একটি উদ্দেশ্য।
(২) খাবারে অনেক সময় রােগজীবাণু থাকতে পারে। রান্নার সময় উত্তাপে অণুজীব মরে যায়। তাই খাবার অনুজীবমুক্ত করার জন্য আগুনের তাপে রান্না করা
(৩) রান্নার সময় বিভিন্ন উপকরণ ও মসলা দিয়ে খাবার উপাদেয় করা যায়। নানাভাবে ও নানা উপকরণ সহযােগে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করা রান্নার আরও একটি কারণ।
* রান্না
করতে গিয়ে খাদ্যের যে পরিবর্তন ঘটে
এর ফলাফল জেনে নেয়া রন্ধনকারীর অবশ্য কর্তব্য। কারণ খাদ্য নাড়াচাড়া, ধােওয়া, কাটা ও রান্না করার সময়
কিছু খাদ্য উপাদান (ভিটামিন সি, থিয়ামিন, রিবােফ্লাবিন) নষ্ট হয়। খাদ্যের উপাদান যাতে নষ্ট না হয় সে
জন্য খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবেশনে যথেষ্ট
সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়ােজন। কিরূপ সতর্কতা অবলম্বন করলে খাদ্য উপাদান নষ্ট হবে
না
১) খাদ্য কেনাকাটার পর যত্ন নেয়া :মাছ, মাংস এসব পচনশীল খাবার। খুব তাড়াতাড়ি অণুজীব দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং পচতে আরম্ভ করে। এজন্য বাজার থেকে আনার সাথে সাথেই মাছ, মাংস রান্না করতে হবে, নয়ত পলিথিনের ব্যাগে মুড়ে রেফ্রিজারেটরে রাখতে হবে। শাক, সবজি, ফল অযত্নে খােলা ফেলে রাখলে পরিবেশের তাপে শাক-সবজি-ফলের পানি বিয়ােজিত হয়ে, ভিটামিন সি নষ্ট হবে। তাই গাছ থেকে পাড়ার পর বা কেনার পর শাক, সবজি, ফল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে কোন পাত্রে ঢেকে রাখতে হবে, নতুবা রেফ্রিজারেটরে সবজির পাত্রে বা পলিথিনের ব্যাগে রাখতে হবে। আলােতে খােলা রাখলে দুধের রিবােফ্লাবিন নষ্ট হয় বলে জ্বাল দেবার পর দুধ ঠাণ্ডা করে ঢেকে অন্ধকার জায়গায় রাখা দরকার। ডিম ধুয়ে রেফ্রিজারেটরে বা ঠাণ্ডা জায়গায় রাখতে হবে। শুকনা খাবার বা মচমচে খাবার মুখবন্ধ পাত্রে রাখবে যাতে বাতাস ও পানি না ঢোকে।
(২)
রান্নায় সতর্কতা অবলম্বন : রান্না করার আগে খাদ্য ধুয়ে কেটে নিতে হয়। ধােওয়ার সময় খাদ্যের ভিটামিন সি, থিয়ামিন, রিবােফ্লাবিন পানিতে মিশে বেরিয়ে যায়। আর এসব ভিটামিন
বেশির ভাগ ফল ও সবজির
খােসা এবং খােসার নীচে থাকে। তাই সবজি, ফল খােসা ছাড়িয়ে
টুকরা করলে ভিতরের অংশ উন্মুক্ত হয়ে বাতাসের সংস্পর্শে আসে এবং ভিটামিন নষ্ট হয়, আবার যখন পানিতে ডুবিয়ে ধুয়ে পানি ফেলে দেয়া হয় সেই পানির সাথে মিশে অনেক ভিটামিন চলে যায়। যত বেশি পানিতে
দেওয়া হবে এবং যত বেশিবার ধােওয়া
হবে তত। বেশি ভিটামিন খাবার হতে পানির সঙ্গে মিশে বেরিয়ে যাবে। অতএব সাবধান
1.শাক-সবজি কাটার আগে ধুতে হবে।
2.খােসা ছাড়াবার পর যথাসম্ভব বড় করে টুকরা করতে হবে।
3.কাটার পরই রান্না করতে হবে।
4.যথাসম্ভব অল্প পানিতে সবজি সিদ্ধ করতে হবে।
5.ঢেকে রান্না করতে হবে। হাঁড়ির মুখ খােলা থাকলে বাষ্পের সঙ্গে ভিটামিন বেরিয়ে যাবে।
6. শাক-সবজি সিদ্ধ হতে যেটুকু সময় প্রয়ােজন ঠিক সেটুক সময় চুলায় রেখে খাবার নামিয়ে নিতে হবে। বেশি সময় চুলায় রেখে অতিরিক্ত সিদ্ধ করলে। | উত্তাপে খাবারের রং ও আকার নষ্ট হবে, সে সাথে ভিটামিনও নষ্ট হয়ে যাবে।
7. চালের
থিয়ামিন পানির সাথে মিশে যায় বলে অনেকবার চাল ধােওয়া এবং রান্নার পর ভাতের মাড়
ফেলা উচিত নয়। ভিটামিন সি নষ্ট হয়
বলে শাক কচিকচি করে কাটার পর পানিতে ধােয়া
উচিত নয় এবং সবজি সিদ্ধ করার পর সিদ্ধ পানি ফেলে দেয়া উচিত নয়। আম, কলা, পেয়ারা,
আপেল কেটে রাখলে বাতাসের সংস্পশে কালচে রং ধারণ করে। এসব খাবার তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গে
পরিবেশন করা দরকার।
(৩) পরিবেশনে করণীয় বিষয় : রান্নার পর পরই খাবার পরিবেশন করা দরকার। বিশেষ করে শাক-সবজি খাওয়ার ঠিক আগে রান্না এবং চুলা হতে নামাবার ঠিক পরই পরিবেশন করার নীতি প্রত্যেক পরিবারেই পালন করা উচিত। খাদ্যের উপাদান যতদূর সম্ভব নষ্ট হতে না দেয়া, স্বাদ ঠিক রাখা এবং খেয়ে তৃপ্তি পাওয়ার জন্য এসব বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়ােজন।