আহারে কোনও একটি খাদ্য উপাদান বহুদিন ধরে বাদ পড়লে সেই উপাদানের অভাবে শরীরে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। নানারকম লক্ষণ হতে অভাবজনিত রোগের  ধরা পড়ে। অভাব মারাত্মক রকমের হলে রােগীর অবস্থা সংকটাপন্নহয়।

 

শিশুর খাদ্যে ক্যালরি ও প্রােটিনের পরিমাণ প্রতিনিয়ত কম হতে থাকলে দেহের মাংসপেশী ধীরে ধীরে ক্ষয় পেতে থাকে। প্রােটিনের চরম অভাব হলে শরীরে পানি আসে ও শরীর ফুলে যায় এবং রােগী নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ রােগের নাম কোয়াশিয়রকর। এ অবস্থায় শুধু বালি, সুজি ও সরবত খাওয়ালে কোয়াশিয়রকর রােগ প্রকট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

 

খাদ্যের অভাবেও শিশুদের শরীর ক্ষয় পেতে থাকে। এতে চেহারা এবং হাত পায়ের চামড়া ঝুলে পড়ে। মেরাসমাস রােগে এরূপ লক্ষণ দেখা যায়। এটাও প্রােটিন এবং ক্যালরির অভাবজনিত রােগ। প্রােটিন, শর্করা, স্নেহপদার্থ সব পুষ্টির মিলিত অভাবে শিশুদের মেরাসমাস হয়।

লােহা, প্রোটিন এবং অন্যান্য যে সব খাদ্য উপাদান রক্তের লাল কনিকা তৈরী করে খাদ্যে সে সব উপাদানের অভাব হলে এনিমিয়া হয়। এনিমিয়া মারাত্মক হলে রােগীর অবস্থা সংকটজনক হয়। সন্তান-সম্ভবা মাতা ও বয়ঃপ্রাপ্ত স্ত্রীলােকের এনিমিয়া রােগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ রােগে শরীর দুর্বল হয়, খিচুনী হয় এবং শরীরে পানি আসে।

 

আহারে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি'র অভাব হলে শৈশবে ও বাল্যকালে রিকেটস রােগ হয়। এতে হাড়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও গঠন মজবুত হয়। এবং পায়ের হাড় বেঁকে যায়। পাঁজরের হারে গিট পড়ে।

 

আয়ােডিনের অভাবে গলা ফুলে ঝুলে পড়ে। এ রােগের নাম গলগণ্ড।

 

অনেকদিন যাবৎ খাদ্যে ভিটামিন এ'র অভাব থাকলে চোখের জ্যোতি কমতে থাকে, রাতের অন্ধকারে দেখতে অসুবিধা হয়। রাতকানা ভিটামিন এ'র অভাবজনিত রােগ। কিন্তু ভিটামিন এ'র মারাত্মক অভাবে চোখের ভিতর শুকিয়ে যায়। আলােতে চোখ মেলতে অসুবিধা হয়। চোখের পাতা ফুলে যায়, চোখে পুঁজ জমে জেরপথ্যালমিয়া রােগ হয়। ভিটামিন এ'র অভাব চরম হলে ব্যাকটেরিয়ার। আক্রমণে চোখের কর্ণিয়াতে আলসার হয়ে কর্নিয়া নরম হয়ে ফেটে ভিতরের সমস্ত অংশ বেরিয়ে আসে। এতে দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে অন্ধ হয়ে যায়।

থিয়ামিনের অভাবে স্নায়ু দুর্বল হয়, কাজে উৎসাহ কমে যায়, খাওয়ার অরুচি। হয়। থিয়ামিনের অভাব প্রকট হলে বেরিবেরি রােগ হয়। এ রােগে হাত-পায়ের গাঁটে ব্যথা হয়, গাঁট ফুলে যায় এবং হাতে ও পায়ে পানি আসে। অবশেষে প্যারালাইসিস হয়ে রােগী পঙ্গু হয়ে যায়।

 

খাদ্যে অনবরত রিবােফ্লাবিনের পরিমাণ কম হতে থাকলে ঠোটের কোণা ফেটে যায়। ঠোটে, জিহবায় এবং মুখে ঘা হয়। নিয়াসিনের অভাবে হাতের চামড়া খসখসে। লাল হয়ে পরে কালাে হতে থাকে।

 

ভিটামিন সি'র অভাবে স্কার্ভি রােগ হয়। দাঁতের মাড়ি ফলে মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, হাত-পায়ের গাঁটে ব্যথা স্কাভির লক্ষণ। দেহে যদি ভিটামিন সি'র অভাব থাকে তাহলে কোন ক্ষত হলে ঘা শুকাতে বিলম্ব হয়। ভিটামিন সি’র তীব্র অভাবে দেহের বিভিন্ন তন্তু ক্ষতিগ্রস্থ হয়।